সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ভেঙে পড়ল বর্ধমানের একটি ঐতিহাসিক হেরিটজ ভবন। শনিবার রাতে বর্ধমান ষ্টেশনের দোতলা ভবনের একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার ঘটনায় রীতিমত দুঃখ পেলেন বর্ধমানের ইতিহাসবিদরা। এদিন বর্ধমানের বিশিষ্ট ইতিহাস গবেষক ড. সর্বজিত যশ জানিয়েছেন, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্ধমানবাসী তথা রাজ্যবাসীও একটি হেরিটেজ ভবনকে হারালো। 

তিনি জানিয়েছেন, ১৮৫৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী হাওড়া থেকে প্রথম বর্ধমানে ট্রেন এসেছিল। খোদ গর্ভণর জেনারেল সেদিন হাওড়া থেকে এই ট্রেনের সূচনা করেছিলেন। আর ১৪টি কামরার প্রথম এই হাওড়া বর্ধমান ট্রেনটি হাওড়া ছাড়ে সকাল ৯টা ৪০ মিনিট নাগাদ। ১৫ মিনিট পর দ্বিতীয় ট্রেনটি ছাড়ে। হাওড়া থেকে বর্ধমান আসার পথে শ্রীরামপুরে ইঞ্জিনের জল নেবার জন্য এবং চন্দননগরে ফরাসি গর্ভণরের জন্য ট্রেনটি থামে। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ট্রেনটি বর্ধমান পৌঁছায়। 

সর্বজিত যশ জানিয়েছেন, প্রথম এই ট্রেনকে স্বাগত জানাতে এবং ট্রেন যাত্রীদের জন্য সেদিন বর্ধমানের মহারাজ সুসজ্জিত হাতির পিঠে চেপে বর্ধমান ষ্টেশনে হাজির হয়েছিলেন। ট্রেনের সমস্ত যাত্রীদের জন্য তিনি খাবারেরও ব্যবস্থা করেন। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ ফের বর্ধমান থেকে হাওড়ার দিকে রওনা দেয় ট্রেনটি। সর্বজিত বাবু জানিয়েছেন, সেই সময়ই বর্ধমান ষ্টেশনের এই ভবনটি নির্মিত হয়। ফলে নয়নয় করেও বর্ধমান ষ্টেশনের এই ভবনটি যা শনিবার রাতে ভেঙে পড়েছে তার বয়স প্রায় ১৬৫ বছরের কাছাকাছি। 

তিনি জানিয়েছেন, গোটা রাজ্যের বুকে যে কয়েকটি পুরনো ষ্টেশন রয়েছে তার মধ্যে বর্ধমান ষ্টেশন অন্যতম। তিনি জানিয়েছেন, যেহেতু বর্ধমান ষ্টেশনকে ঘিরে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই তাই এই হেরিটেজ ভবনের অনেক আগে থেকেই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন ছিল। যেভাবে হুড়মুড়িয়ে ভবনটি ভেঙে পড়েছে তাতে গোটা রাজ্যবাসীর সঙ্গে বর্ধমানবাসীও একটি ঐতিহাসক স্মৃতি বিজড়িত ভবনকে হারালো বলে জানিয়েছেন ইতিহাসবিদ সর্বজিত যশ। 

অপরদিকে, শনিবার এই হেরিটেজ ভবনের ভেঙে পড়ার পর অনেকেই বলতে শুরু করেছেন বর্ধমান কাটোয়া রোডের দিকে ভবনের একাংশ অনেক আগে থেকেই হেলতে শুরু করেছিল। ফলে রেল দপ্তরের এব্যাপারে আগেই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এরই পাশাপাশি এই ভবন ভেঙে পড়ার পর কেন ভবনটি ভাঙল তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা কল্পনা। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, গত কয়েকদিন ধরেই ভবনের মেরামতির জন্য যে ভাইব্রেটর মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে তার জেরেই ফাটলের সৃষ্টি হয়। আর তারই ফলে এই ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে, কেউ বলেছেন, এই পুরনো ভবনের লোহার কড়িবরগাগুলি ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছিল। তার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। আবার অনেকে বলেছেন, ভবনের ইঁটগুলিও নষ্ট হয়ে গেছিল। তাই এই ঘটনা। 

 

অন্যদিকে, দেখা গেছে, ভবনের ছাদের ওপর যে আস্তরণ ছিল তা প্রায় নষ্ট হয়ে গেছিল। ফলে একটু একটুকরে ছাদ দিয়ে জল চুঁইয়ে দেওয়ার ক্ষমতাকে খর্ব করে দিয়েছিল, তার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। এদিকে রবিবার দুপুরে বর্ধমান ষ্টেশনে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সুনীত শর্মা জানিয়ে গেলেন, তদন্ত রিপোর্ট হাতে আসার পরই জানা যাবে কি কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ‌্য, ইতিমধ্যেই বর্ধমান ষ্টেশনের এই দুর্ঘটনায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এই ঘটনায় দায়ী কারা তা চিহ্নিত করে শাস্তি দেবার কথা বলেছেন।

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: