শনিবার রাতে বর্ধমান ষ্টেশন ভবনের একাংশ ভেঙে পড়ার ঘটনায় চাপান উতোর চলছেই। সোমবারই ঘটনার তদন্তে রেলের ৩ সদস্যের কমিটি ঘুরে যাবার পর মঙ্গলবার সকালেই ঘটনাস্থলকে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হল। আর এরপরে ফের নতুন করে বিতর্ক উস্কে উঠল। 

সাধারণ মানুষ তথা রেলযাত্রীরা এদিন রীতিমত রেল দপ্তরের গাফিলতি নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি ত্রিপল দিয়ে ঘটনাস্থলকে আড়াল করার ঘটনায় কলঙ্ক চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করতে ছাড়েননি। এমনকি অনেকে এটিকে রেলের লজ্জা ঢাকার প্রয়াস বলেও ব্যাখ্যা করেছেন। উল্লেখ্য, শনিবার রাতে এই ঘটনার পর কাতারে কাতারে উৎসুক মানুষ বর্ধমান ষ্টেশন ঘুরে যান। তোলেন সেলফিও।

 


ঘটনার পরই ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে ত্রিপল দিয়ে ঘিরেও দেওয়া হয়। গত কয়েকদিন ধরেই কৌতূহলী মানুষ সেই ত্রিপলের ফাঁক দিয়েই ঘটনার বীভৎসতা দেখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সোমবার তদন্তকারী দল ঘুরে যাবার পর দুর্ঘটনাগ্রস্থ স্থানটিকে হলুদ ও সবুজ ত্রিপল দিয়ে মুড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।

বর্ধমান জেলা যুব কংগ্রেসের সভাপতি গৌরব সমাদ্দার জানিয়েছেন, এভাবে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেবার পিছনে একটাই যুক্তি কাজ করছে, আর তা হল রেল তার কলঙ্ককে আর সাধারণ মানুষকে দেখতে দিতে চাননা। যদিও এব্যাপারে রেলের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্যই পাওয়া যায়নি। অপরদিকে, এই ঘটনায় রীতিমত রেলের বিরুদ্ধে সবপক্ষই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। সবথেকে বিস্ময়কর এবং এনিয়ে গোটা বর্ধমান জুড়েই রীতিমত আলোড়ন উঠেছে খোদ বর্ধমান – দুর্গাপুর লোকসভার বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্রজিত সিং অহলুবালিয়ার দেখা না পাওয়ায়। 

এত বড় দুর্ঘটনার পর কেন দেখা নেই বিজেপি সাংসদের তা নিয়ে রীতিমত জলঘোলাও শুরু হয়েছে। এব্যাপারে অহলুবালিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন তোলেননি। বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ তাই তিনি আসতে পারেননি। অন্যদিকে, একই অভিযোগ উঠেছে বিগত লোকসভা নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী রণজিত মুখার্জ্জীর বিরুদ্ধেও। লোকসভা নির্বাচনের সময় তিনি প্রার্থী হিসাবে সবসময় বর্ধমানবাসীর পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ইংরাজী নববর্ষের শুরুতেই যেভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে কংগ্রেসের প্রার্থী থেকে বিজেপির নির্বাচিত সাংসদের অনুপস্থিতি নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। 

উল্লেখ্য, বর্ষবরণের রাতেই বর্ধমানের গলসী থানার শিকারপুরে বালি বোঝাই ডাম্পার উল্টে একই পরিবারের ৫জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর গত শনিবার বর্ধমান ষ্টেশনের একাংশ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। এরই পাশাপাশি অল্পের জন্য বড়সড় রেল দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় বর্ধমান। পাল্লা ষ্টেশনের কাছে রেল লাইনের ফাটল দেখেন এক কলেজ পড়ুয়া। পরপর তিনটি ঘটনার মধ্যে গলসীতে একই পরিবারের ৫জনের মৃত্যু এবং বর্ধমান ষ্টেশনের হেরিটেজ ভবন ভেঙে পড়ার ঘটনায় কেন তাঁদের দেখা পাওয়া গেল না? 

খোদ কংগ্রেস প্রার্থী রণজিত মুখার্জ্জী জানিয়েছেন, তিনি বর্তমানে দলের গুরুত্বপূর্ণ কাজে দিল্লীতে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি ঘটনার কথা শুনেই রেলের পদস্থ কর্তাদের ফোন করেছেন। এমনকি দলীয় স্তরেও তিনি খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহের শেষে তিনি বর্ধমান যাবেন। অপরদিকে, এই ঘটনায় রেলের সম্পূর্ণ গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন সিপিএমের বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভার প্রার্থী আভাষ রায় চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার অব্যবহিত পরেই তিনি বর্ধমান ষ্টেশনে পৌঁছান। রেলের এব্যাপারে সচেতন হওয়ার দরকার ছিল। গাফিলতির কারণ স্পষ্ট। 

অপরদিকে, বর্ধমান -দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক জানিয়েছেন, তিনি সাংসদ থাকাকালীন বর্ধমান ষ্টেশনের যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ৯০ লক্ষ টাকা সাংসদ কোটা থেকে দিয়েছিলেন। আজও রেল সেই টাকার কোনো হিসাবই দেননি। এমনকি তিনি দাবী করেছেন, খোদ বর্তমান জেলাশাসক বিজয় ভারতীও এব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষকে জানালেও তাঁরও চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি রেল। 

সাইদুল বাবু জানিয়েছেন, তিনি সাংসদ থাকাকালীন বর্ধমান ষ্টেশনে চলমান সিঁড়ি, রেম্প তৈরীর জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু চলমান সিঁড়ি বসলেও এখনও রেম্প তৈরী হয়নি। আবার চলমান সিঁড়ি বসানো হলেও তা সঠিকভাবে চলছে না। তিনি জানিয়েছেন, রেলের গাফিলতির জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। কেবল ভাড়াই বাড়াচ্ছে রেল, কিন্তু কোনো পরিষেবা পাচ্ছেনা সাধারণ মানুষ।

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: