নামকরণ৷ সদ্যোজাতের নতুন নাম কী হবে, তা নিয়ে হন্যে হয়ে খুঁজি আমরা সকলে৷ তাই নিয়েই লিখেছেন সাংবাদিক অনিমেষ বৈশ্য৷ তাঁর ফেসবুকের টাইম লাইন থেকে লেখাটি তুলে ধরা হল হুবহু৷
আজকাল ছেলেমেয়ের নাম রাখা নিয়ে রীতিমতো মল্লযুদ্ধ চলে। সন্তান পেটে এলেই অভিধান খুলে নাম খোঁজা শুরু হয়। নামকরণের বইও মেলে বাজারে। বাঙালি ছাড়া অন্য কেউ নাম নিয়ে এত ভাবনাচিন্তা করে বলে আমার জানা নেই। নাম একটু দুর্বোধ্য হলে কদর বাড়ে, কাব্যিক হলে সুশীল-সমাজে নাম ওঠে। অমল, বিমল, কমল, কাত্যায়নী, বগলা—ইত্যাদি নাম আজকাল কেউ রাখে না। অন্তত কয়েক হাজার নাম এখন ‘বিপন্ন’ প্রজাতির তালিকায়। 
আরও পড়ুন: বাংলা ভাষাকে ভালোবাসতে গেলে অন্যভাষা চর্চারও দরকার
নিজের নাম পৃথিবীর মধুরতম শব্দ। নেপোলিয়ন তাঁর সেনাবাহিনীতে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। কারণ, তিনি প্রতিটি সেনার নাম জানতেন এবং নাম ধরে ডাকতেন। সুতরাং নাম সুন্দর হলে দোষের কিছু নেই। বরং খারাপ নাম হলে প্রবল হীনমন্যতা ছেঁকে ধরে। আমার এক বন্ধুর ডাকনাম ছিল খ্যাদা। কলেজের নবীন বরণে সে আমাকে আড়ালে বলেছিল, ‘তুই কিন্তু আমাকে খ্যাদা বলে ডাকিস না।’ বিরহী নামে কলেজের একটি মেয়েকে খ্যাদার খুব ভালো লেগেছিল। খ্যাদা নাম শুনে বিরহীর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে তার দুর্ভাবনা ছিল প্রবল।
আরও পড়ুন: ‘পুলওয়ামার শোকদিবস ভারতবাসীর শপথ নেওয়ার দিন’
রবীন্দ্রনাথ বোধহয় কয়েক হাজার ছেলেমেয়ের নাম রেখেছেন। তাদের মধ্যে যে কয়েকটা আমি জানি, কোনওটাই দুর্বোধ্য নয়। তাঁর নিজের ছেলেমেয়েদের নাম ছিল মাধুরীলতা (বেলা), রথীন্দ্রনাথ, রেনুকা(রানি), মীরা (অতসী) ও শমীন্দ্রনাথ। কোনওটাই দাঁতভাঙা নাম নয়।কবির শব্দভাণ্ডার দুর্বল ছিল বলে কোনও অভিযোগ নেই।
আরও পড়ুন: ‘বিজেপি আর কিছুই নয়, নব কংগ্রেস’
মুসলিমদের মধ্যে আরবি-ফার্সি নামের প্রচলন বেশি। তবে এই রীতি ভেঙে ফেলেন নজরুল ইসলাম। তাঁর আগেও কেউ ভাঙতে পারেন। আমি জানি না। তাঁর পুত্রদের নাম সব্যসাচী ও অনিরুদ্ধ। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের দুই পুত্র অভিজিৎ ও অমিতাভ আমার বন্ধু এবং প্রাক্তন সহকর্মী। অমিতাভর মেয়ের নামটি ভারি সুন্দর—সবুজশ্রী। শিক্ষিত মুসলমানরা আজকাল আরবি বা ফার্সি নামের চেয়ে বিশুদ্ধ বাংলা নাম পছন্দ করেন বেশি। তার কারণ সম্ভবত একটাই। ভাষা ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য।আমার পাড়ার ডাক্তারবাবু এস কে মহিউদ্দিন তাঁর দুই মেয়ের নাম রেখেছেন প্রত্যাশা ও প্রেরণা।
আরও পড়ুন: ‘তবু ঠাঁই নেই কারও অন্দরে’
সেদিন কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের আবৃত্তিকার সিফাত বন্যার সঙ্গে। প্রথম আলাপ। আমি ওকে বললাম, তোমার নামটি তো খুব সুন্দর। সিফাত। কিন্তু সিফাত মানে কী?’ সে বলল, সিফাত একটি গুণবাচক আরবি শব্দ। কিন্তু নামটি তার মোটেই ভালো লাগে না। তার পর সিফাত বলল, কিছুদিন আগে ওর বিয়ে হয়েছে। মেয়ে হলে নাম রাখবে ‘ভাষা।’ আর ছেলে হলে ‘বাক্য।’ এই কথা যখন সে লিখছিল তখন তার চোখমুখ আমি দেখিনি। কিন্তু আন্দাজ করতে পারি। অজস্র বর্ণমালা তার বুকের ভিতর এক্কা-দোক্কা খেলছিল।
আরও পড়ুন: শিকারা, এক বেদনা বিধুর সিনে-কাব্য
আমার চোখে জল এল। মাতৃভাষাকে কেউ ভালোবাসছে দেখলে নিকোনো উঠোনে অবিরল শিউলি ঝরতে থাকে। আমার মতো নিষ্কর্মাদের ভাষা ছাড়া আর আছে কী?

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: