উন্নাওয়ে গণধর্ষিতা তরুণী যাকে অভিযুক্তরা গায়ে আগুন দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিল, তাঁর জীবনসংগ্রাম এদিন থেমে গেল। দিল্লির হাসপাতালে শুক্রবার রাত ১১:৪০ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ২৩ বছরের যুবতী। তাঁকে বৃহস্পতিবার লখনৌ হাসপাতাল থেকে দিল্লিতে সফদরজং হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল। তবে শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে যাওয়ায় শরীর আর চিকিৎসায় সাড়া দিতে পারেনি।
মারা যাওয়ার আগে নির্যাতিতা পরিবারকে জানিয়েছিলেন যে তিনি মারা যেতে চান না। অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে সেটা দেখতে চান। নিজের দাদাকে তিনি বলেছিলেন, আমাকে বাঁচাও। আমি মরতে চাই না। যারা আমার সঙ্গে এমনটা করেছে তারা মৃত্যুদণ্ড পাক সেটা দেখতে চাই।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শনিবার রাত ১১:১০ মিনিটে নির্যাতিতার একটি হার্ট অ্যাটাক হয়। সেইসময় তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও তারা সফল হননি। এরপর ১১:৪০ মিনিটে তিনি মারা যান। হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক বিভাগের প্রধান শলভ কুমার এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
উন্নাওয়ের সিন্দুরপুর গ্রামে ২৩ বছর বয়সী এই যুবতীকে আক্রমণ করা হয়। তাঁর ধর্ষণ মামলার শুনানিতে রায়বরেলি আদালতে যাচ্ছিলেন তিনি। পাঁচ অভিযুক্ত যার মধ্যে দুজন তার ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত – এরা তাঁর পথ আটকে দাঁড়িয়ে তাঁকে পাশের ঝোঁপে টেনে নিয়ে গিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেয়।
বৃহস্পতিবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্যাতিতা তরুণী জবানবন্দি দিয়েছেন। তার জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, কোন পাঁচজন অভিযুক্ত তাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে। তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে তাকে ছুরি দিয়ে কোপানোর পরে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়।
সেই অবস্থাতেই উন্নাওয়ের নির্যাতিতা এক কিলোমিটারের বেশি রাস্তা ছুটে এসেছিলেন। সেখানে এসে তিনি সাহায্য পান। নিজেই পুলিশকে ফোন করে গোটা বিষয়টি জানান। পুলিশ ও অ্যাম্বুল্যান্স এসে নির্যাতিতাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছিল শরীরের প্রায় পুরোটাই পুড়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। তবে সেই ডেডলাইন পেরোনোর আগেই থেমে গেল উন্নাওয়ের নির্যাতিতা লড়াই।
যে পাঁচ অভিযুক্ত এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ, সেই হরিশংকর ত্রিবেদী, রামকিশোর ত্রিবেদী, উমেশ বাজপেয়ী, শিবম ও শুভম ত্রিবেদীকে ঘটনার পরই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে শুভম ত্রিবেদী ঘটনার মূল চক্রী বলে চিহ্নিত হয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এই শুভম ত্রিবেদী ও শিবম উন্নাওয়ের নির্যাতিতাকে অপহরণ করে ধর্ষণ করে। এরপর মার্চ মাসে এই দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নির্যাতিতা। শুভম ধর্ষণ মামলায় ৩০ নভেম্বর জেল থেকে জামিনে ছাড়া পায়। এবং ছাড়া পেয়েই নির্যাতিতাকে হুমকি দিতে থাকে বলে অভিযোগ। তাঁর পরেই তাঁকে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়।

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: