প্রচুর পরিমাণে বরাদ্দ থাকা স্বত্বেও এবং খরচ হওয়া স্বত্বেও জনমানসের ওপর তার প্রভাব কতটা তা নিয়ে প্রশাসন সন্দিহান।  বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর। এক শ্রেণির অফিসারের কাজে অবহেলা, বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব যে সরকারের ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন এটা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেন মুখ্যসচিবকে।

তার পরেই বৈঠকে এক গুচ্ছ দাওয়াই বাতলে দেন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। যার মোদ্দা কথা হল: লাল ফিতের ফাঁস খুলে প্রশাসনকে আরও গতিশীল করতে হবে এবং সরকার যে-কাজ করছে, তার প্রভাব যাচাই করতে হবে আমজনতার মধ্যে।

মুখ্যসচিব দু’টি পর্যায়ে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় রাশ টানতে চান। সচিবালয় স্তরে দফতরগুলির কাজকর্ম সচিবদের আরও কঠোর ভাবে তদারক করতে বলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে বলেছেন জেলাশাসক, বিডিও-দের। ডিএম-রা বছরে দু’বার ব্লক স্তরে বৈঠক করবেন এবং তার আগে আমজনতার মুখোমুখি বসে শুনে নেবেন তাদের অভাব-অভিযোগ। ব্লক স্তরের বৈঠকে তিনি তা জানানোর পরে বিডিও-রা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে গিয়ে সমস্যার সুরাহা করবেন। ব্লক স্তরে অন্য অফিসারদের এক-এক জনকে এক-একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের নোডাল অফিসারের দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে জনসংযোগে এ ভাবেই প্রশাসনকে হাতিয়ার করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। ডিএম, বিডিও-দের মাধ্যমে তৃণমূল স্তরে সমস্যা মেটানো যাবে।

মুখ্যসচিব বৈঠকে জানান, সমন্বয় বাড়ানো এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজের সরলীকরণের জন্য সব দফতরের সচিবদের নিয়ে পৃথক ভাবে বৈঠক হবে। মুখ্যসচিব অন্যত্র ব্যস্ত থাকলেও দফতরের সচিবেরা সমন্বয় বৈঠক করবেন নিজেদের মধ্যে।

প্রকল্প রূপায়ণে দরপত্র ডাকা, এজেন্সি বাছাই, লোক নিয়োগ ইত্যাদি কত সহজে, কত কম সময়ে করা যায়, তার উপরে জোর দিয়েছেন মুখ্যসচিব। টেন্ডার-পদ্ধতির দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। একটি দফতরে টানা ১১ বার দরপত্র ডাকার উদাহরণ টেনে মুখ্যসচিব জানান, কাজের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করলেই হবে না, অফিসারদের দায়বদ্ধতাও নিশ্চিত করতে হবে। পরিকল্পনা করতে সময় নষ্ট করা চলবে না। এই সূত্রেই ডিজিটাল রেশন কার্ডের বণ্টন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানতে চান, কার্ড বা চাল রাজ্য স্তর থেকে বিলি হলেও সেটা উপভোক্তার কাছে পৌঁছচ্ছে কি না। খাদ্যসচিব তাঁকে জানান, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে অনলাইন পদ্ধতি চালু হবে, তাতে উপভোক্তার চাল সংগ্রহের তথ্য জানতে পারবে রাজ্য। বিভিন্ন আমলার বক্তব্য, মুখ্যসচিব নতুন কিছু বলেননি। তবে প্রশাসনিক যন্ত্রে যে মাঝেমধ্যে ধাক্কা দিতে হয়, সেটাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

 

 


మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: