উপনির্বাচনের ফল যে কেন এমন হল তা বোঝা যায়নি প্রথমে। ভোটের আগে সবার ধারনা ছিল ৩ টের মধ্যে ২ টো আসন বিজেপি পাবে আর তৃনমূল ১ টা। কিন্তু ফলাফল সম্পূর্ণ উল্টে গেল। কারণ খুঁজতে গিয়ে বেশ কয়েকটা ‘ফ্যাক্টর’-এর কথা উঠে আসছে। প্রথমত, এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, মুসলিম ভোট পুরোটা তৃণমূলের বাক্সে জমা পড়েছে, হিন্দু ভোটও কিছুটা ভেঙেছে, মত বিশ্লেষকদের অনেকের। কিন্তু এই মত মানতে অনেকে আবার রাজিও নন। এনআরসি আতঙ্কই যদি ভোটে বিজেপির হারের কারণ হবে, তা হলে খড়্গপুর সদর আসনে হার হল কেন? তোলা হচ্ছে এই প্রশ্ন।

তেলুগু, হিন্দিভাষী, পঞ্জাবি-সহ বিপুল সংখ্যক অবাঙালির বাস খড়্গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রে। ৩৫ ওয়ার্ডের পুরসভার পাশাপাশি রয়েছে ৮০ হাজারেরও বেশি জনসংখ্যার রেলওয়ে সেট্‌লমেন্টও। শহরের বাঙালি বাসিন্দাদের মধ্যে পূর্ববঙ্গীয়দের সংখ্যা নগণ্য। ফলে এনআরসি ইস্যুতে সে ভাবে আতঙ্কের ছাপ পড়েনি খড়্গপুরে।

এ হেন খড়্গপুর সদর প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে কংগ্রেসের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি ছিল। ২০১৬ সালে সেখানে প্রথম বার জেতেন বিজেপির দিলীপ ঘোষ। ২০১৯ সালে তিনিই লোকসভা নির্বাচনে লড়েন এবং খড়্গপুর সদর থেকে আরও অনেক বেশি লিড পান। কখনও খড়্গপুরে জিততে না পারা তৃণমূল তা হলে এ বার জিতে গেল কোন মন্ত্রে?

দুটো তত্ত্ব উঠে আসছে খড়্গপুর থেকে। এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেই যেমন তৃণমূল ভোট পায়, তেমনই রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের একটা ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই তিনি যখন যখন ভোটে দাঁড়িয়েছেন, ভোট পেয়েছেন। তিনি প্রার্থী না হওয়াতে বিজেপি আর ভোট পায়নি।

দুই, খড়্গপুরে ভোট আসলে পেয়েছিল বিজেপি-ই, ব্যক্তি দিলীপ ঘোষ নন। এখন বিজেপির প্রতি জনগণ রুষ্ট, তাই আর আগের মতো ভোট ধরে রাখা গেল না।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতও অনেকটা মিলছে এই দ্বিতীয় তত্ত্বের সঙ্গে। তিনি বলছেন, তৃণমূলের জয়ের চেয়ে বেশি করে এটা হল বিজেপির হার। বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে তৃণমূল লাভটা ঘরে তুলল বলে তাঁর মত। কিন্তু তৃণমূল তো গত বিধানসভা নির্বাচনেও খড়্গপুরে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল না। লড়াই তো তখনও ছিল কংগ্রেস আর বিজেপির মধ্যে। এ বার তৃণমূল প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠল কী ভাবে? উদয়নের ব্যাখ্যা, ‘‘খড়্গপুরের মানুষ দীর্ঘ দিন কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। তার পরে বিজেপিতে আস্থা রেখেছেন। কিন্তু হিন্দুত্বের অতিরিক্ত আস্ফালন, অর্থনীতির বেহাল দশা, রেলের বেসরকারিকরণের সম্ভাবনা নিয়ে চর্চা, কাজের বাজার সঙ্কুচিত হওয়া— এ সব নিয়ে বিজেপির প্রতিও মোহভঙ্গ হয়েছে। তাই যে দলকে আগে কখনও ভোট দেননি খড়্গপুরের মানুষ, এ বার সে দলকেই ভোট দিয়ে দিয়েছেন।’’

এখানেই উঠে আসছে দ্বিতীয় ‘ফ্যাক্টর’-এর কথাটা। শুধু এনআরসি নয়, বেহাল অর্থনীতি এবং তার জেরে জনসাধারণের প্রত্যাশা পূরণে বিজেপির ব্যর্থতা, তার জেরে মোহভঙ্গ।

এমনিতে বিজেপির প্রতি এত তাড়াতাড়ি মোহভঙ্গ হওয়ার কারণ পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ছিল না। বিজেপি এখানে বিরোধী দল, তারা এখনও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন হয়নি। ফলে ক্ষমতা-বিরোধিতার হাওয়া বিজেপির বিরুদ্ধে তৈরি হওয়ার কথা নয়। কংগ্রেস এবং বামেরা এখন এ রাজ্যে যে রকম ম্রিয়মান, বিজেপি তা-ও নয়। যথেষ্ট সবল এবং প্রতিবাদী। হয়তো একটু বেশিই। তা সত্ত্বেও যদি বিজেপির বিরুদ্ধে হাওয়া তৈরি হয়, তা হলে সর্বভারতীয় কারণেই যে তৈরি হয়েছে, এ কথা ধরে না নেওয়ার কোনও কারণ নেই।

 

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి:

tmc