নীতি আয়োগের বৈঠকে হাজির মোদীর সাথে তাঁর চার মন্ত্রী। অমিত শাহ, নিতিন গডকড়ী, পীযূষ গয়াল এবং নরেন্দ্র সিংহ তোমর। বৈঠক মূলত অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে। বাজেটের আগের প্রস্তুতি। অর্থ মন্ত্রকের সচিবেরাও রয়েছেন। 

নেই শুধু অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন! 

তাহলে কোথায় তিনি? ঠিক ওই সময়েই তিনি দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে। বিজেপির বিভিন্ন মোর্চার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। শুনছেন আগামী বাজেটে দলের কী প্রত্যাশা। বিভিন্ন ক্ষেত্র ভাগ করে চারটি গোষ্ঠীতে বৈঠক সারলেন তিনি। তাতে হাজির রইলেন বিজেপির কার্যনির্বাহী সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা, সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতা বি এল সন্তোষ-সহ কয়েক জন। 

প্রশ্ন হল, তা হলে কি বিজেপির শীর্ষ নেতারা ঠিক করেছেন যে, নীতি আয়োগে অর্থনীতিবিদ, শিল্পপতি, উদ্যোগপতিদের সঙ্গে বৈঠকে অর্থমন্ত্রীকে রাখা হবে না? যদি তা-ই হয়, তার কারণ কী? এই প্রশ্ন আরও গভীর হয়েছে আজ সকালেই সরকারি ‘সূত্র’-এর পক্ষ থেকে এক প্রচারে। তাতে দাবি করা হল, গত প্রায় এক মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই অর্থনীতির সমস্যা দূর করতে হাল ধরেছেন। 

ব্যাখ্যা হিসাবে গত ডিসেম্বর থেকে প্রায় প্রতি সপ্তাহে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক করছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২০-তে সরকারের রোডম্যাপ কী হবে, মন্ত্রক ধরে ধরে তা স্থির করছেন। সারা দিন ধরে বৈঠক হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও এক বার এমন বৈঠক হবে। পাশাপাশি প্রথম সারির শিল্পপতি, বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ, বণিকসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে ডজনখানেক বৈঠক সেরেছেন। বাজেটের আগে একশোর বেশি ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনাও সেরে ফেলেছেন। এবং সেই সব বৈঠকের কোনওটিতেই ছিলেন না নির্মলা! 

শুধু তা-ই নয়। মোদী টুইট করে আমজনতার থেকে বাজেট নিয়ে পরামর্শও চেয়েছেন ‘মাই গভ’ পোর্টালের মাধ্যমে। বলেছেন, এই বাজেটে ১৩০ কোটি মানুষের প্রত্যাশা জড়িয়ে আছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, দেশ যখন বেহাল অর্থনীতি নিয়ে মোদীর জবাব চাইছিল, তখন বিজেপি হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের চেষ্টা করছিল। আর গোটা দেশ যখন জেএনইউয়ে দুষ্কৃতী তাণ্ডব নিয়ে উত্তাল, তখন সরকার প্রচার করছে, মোদী নাকি অর্থনীতির হাল ফেরানোর চেষ্টা করছেন! কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের কটাক্ষ, ‘‘অর্থমন্ত্রী কোথায়? নাকি দু’জনে ভুলে গিয়েছেন অর্থমন্ত্রী বলে কেউ আছেন?’’ ‘দু’জন’ বলতে মোদীর সঙ্গে অমিত শাহকেও বুঝিয়েছেন তারুর।  

নির্মলার দফতর থেকে পাল্টা টুইট করা হয় শশীকে। গত বছর ৫ অগস্ট থেকে কবে কোন প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেছেন অর্থমন্ত্রী, তার তালিকা দেয় নির্মলার দফতর। নির্মলার এমন যুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তাদের মতে, যদি অর্থমন্ত্রীই সব আলোচনা সেরে রাখেন, তা হলে অমিত শাহ-সহ চার মন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আলাদা বৈঠকের অর্থ কী? আর যদি বৈঠকের দরকার হয়েও থাকে, তা হলে তাতে অর্থমন্ত্রী নেই কেন? 

বিজেপি শিবিরে অনেকেরই বক্তব্য, অর্থমন্ত্রী পদে নির্মলা কখনওই গরহাজির বিজেপির প্রথম পছন্দ ছিলেন না। মৃত্যুর আগে অরুণ জেটলিই মোদীকে অনুরোধ করেন নির্মলাকে অর্থমন্ত্রী করার জন্য। তার পিছনেও ছিল পীযূষ গয়ালকে ঠেকানোর অঙ্ক। নির্মলা কোনও দিন অমিত শাহেরও পছন্দের ছিলেন না। বরং প্রধানমন্ত্রীই একবার চমক দিয়ে বিগ-ফোরে নির্মলাকে এনেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী করে। 

বেশ কয়েক মাস ধরেই দিল্লির অলিন্দে জল্পনা চলছে, ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারি, বৃদ্ধির করুণ দশা মিলিয়ে অর্থনীতির বেহাল দশার ‘মুখ’ কে হবেন? নির্মলা? নাকি বাজেটের পরে মন্ত্রিসভার রদবদলে সরানো হবে তাঁকে? গত বছর বাজেটের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্রের ইস্তফার পরে মনে করা হয়েছিল, মোদীকে না জানিয়ে বাজেটের অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেমন বিদেশে সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত বন্ড ছেড়ে ডলারে ধার নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর সরকারের মুখ পুড়েছিল। সূত্রের দাবি, এখন নির্মলাকে দূরে রেখে সরকার আগাম জানাচ্ছে, মোদী এ বারে রাশ ধরেছেন। 

বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘অর্থনীতির হাল যে খারাপ, সেটি কিছু দিন আগে খোদ প্রধানমন্ত্রীই স্বীকার করে নিয়েছেন। হতে পারে নাগরিকত্ব আইন বা জেএনইউ নিয়ে যে ক্ষোভ, তার পিছনে বেহাল অর্থনীতিও একটা বড় কারণ।’’ 

নীতি আয়োগের বৈঠকে একগুচ্ছ মন্ত্রীর ছবি নিয়ে আজ কংগ্রেস টুইট করে, এক মহিলার কাজ করার জন্য কত জন পুরুষ প্রয়োজন? পাল্টা প্রকাশ জাভড়েকর রাতে বলেন, ‘‘এটি লিঙ্গবৈষম্যমূলক মন্তব্য। এর আগেও নির্মলাকে ‘নির্বলা’ বলেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের মহিলা সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী কী সমর্থন করেন এই মন্তব্য?’’ 

 

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: