দিল্লিতে CAA-র সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে গোলমাল চলছে৷ এই ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে একাধিক স্বর শোনা যাচ্ছে৷ এবার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে লিখলেন সাংবাদিক প্রসূন আচার্য৷ তাঁর ফেসবুকের টাইমলাইন থেকে লেখাটি হবহু তুলে ধরা হল-
ধর্ম-অধর্ম।
আজ কিছু না বললে অধর্ম হতো। তাই দুই মাস বাদে আপনাদের কাছে কিছু বলতে চাই। 
আজ দিল্লিতে ধর্মের নামে যা হচ্ছে আমার আপনার রাজ্যেও তা যে কোনো দিন হতে পারে। আসলে দেশের রাজনৈতিক ‘ন্যারেটিভ’ টাই বদলে গেছে। এক দল বলছে, গর্ব করে বলো আমি হিন্দু। তারা জানে, একশ কোটির হিন্দুর দেশে 20 কোটি মুসলিমকে এক ঘরে করতে পারলেই কেল্লা ফতে। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকা যাবে। তারা সেই চেষ্টাই করছে নিরন্তর। 
আরও পড়ুন: বাংলা ভাষাকে ভালোবাসতে গেলে অন্যভাষা চর্চারও দরকার
আর উল্টো দিকে ওই 20 কোটি মুসলিম প্লাস দলিত- চামার- পিচড়ে বর্গ কে এক করে পাল্টা ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে অন্যপক্ষ। জিতেও যাচ্ছে কিছু রাজ্য। দু- পক্ষই মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। কারণ কোনো দাঙ্গায় এদের বাড়ির কেউ মারা যায় না। আজ অব্দি যায়নি। দুই পক্ষের নেতা ও তার পরিবারের হাতে শত শত কোটি টাকা। আদানি আম্বানি দুই পক্ষকেই সমর্থন করে। টাকা দেয়। নেতা নেত্রীদের সঙ্গে লাঞ্চ ডিনার করে। ছেলে মেয়ের বিয়েতে নিমন্ত্রণ করে। দুই পক্ষই চায়, আমেরিকান পুঁজির আশীর্বাদ। আর দু পক্ষই চায় গদি-মিডিয়া অর্থাৎ যে মিডিয়া তাদের কোলে বসে দোল খাবে।
আরও পড়ুন: বাঙালি ছাড়া অন্য কেউ নাম নিয়ে এত ভাবনাচিন্তা করে কি!
CAA হওয়ার পর, তিন দিন ধরে ট্রেন বাস পুড়িয়ে, স্টেশনে আগুন লাগিয়ে লুটপাট করে পশ্চিমবঙ্গে এক সম্প্রদায়ের মানুষ যে ভাবে তান্ডব করলো, তা আগে কখনো এ রাজ্য দেখেনি। সে দিন পুলিশ প্রশাসন নীরব দর্শক ছিল। কারণ যারা করছে, তারা এখন শাসকের ভোটার। নিশ্চয়ই অদৃশ্য কোনো নির্দেশ ছিল। আজ দিল্লীতেও পুলিশ দর্শকের ভূমিকায়। যারা করছে, মূলত তারা মোদির ভোটার। সেখানেও নিশ্চয়ই অদৃশ্য নির্দেশ আছে। কারণ দিল্লি পুলিশ এতটা নিকম্মা নয়।
আরও পড়ুন: ‘পুলওয়ামার শোকদিবস ভারতবাসীর শপথ নেওয়ার দিন’
বাংলায় মৃত্যুর সংখ্যা কম ছিল, কারণ সংখ্যাগুরু বাঙালি পাল্টা কিছু করেনি। ভালোই করেছিল। যা যাওয়ার সরকারি সম্পত্তির উপর দিয়ে গেছিল। সম্পত্তির তো আর প্রাণ নেই। কারণ তা হলে আজ পূর্ব দিল্লির মত অবস্থা হত পশ্চিমবঙ্গেও। হয়ত আরো খারাপ।
তথাকথিত সেকুলার বামপন্থী, যারা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে রাজ করে আর যাদবপুর প্রেসিডেন্সির পয়সাওয়ালা ঘরের অতি বাম ছাত্ররা, সে দিনও রাস্তায় নেমে রাজ্য জুড়ে আগুন জ্বালানোর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করেনি। আজ দিল্লি যখন জ্বলছে তারা দিল্লির রাস্তা থেকেও হওয়া!! JNU বা জামিয়ার ঘটনার সময় কিন্তু আজাদির আওয়াজ তুলে এদের রাস্তায় মিছিল করতে দেখা গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ‘বিজেপি আর কিছুই নয়, নব কংগ্রেস’
CAA এর জন্য যদি কেউ সুবিধা পায়, তারা হয় বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু বাঙালি, অথবা পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু বা শিখ। কোনো কেরালার মালিয়ালি, বা উত্তর প্রদেশের হিন্দিভাসি বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে থাকে না। এটা সবাই জানে। পাকিস্তান বা বাংলাদেশে ওখানকার সংখ্যালঘুদের উপর নিরন্তর অত্যাচার হয়। সেটাও সবাই জানে। তা সত্ত্বেও CAA নিয়ে সাহীনবাগ, পার্ক সার্কাস এর মত অনেক জায়গাতেই অবস্থান, প্রতিবাদ মিছিল হলো। হোক। এই ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হতেই পারে। কিন্তু যে ভাবে বোঝানো হচ্ছে, CAA করে মুসলিমদের এ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে, তা কি সত্যি? কেন এই মিথ্যে বার বার বোঝান হচ্ছে? বিশেষ করে মহিলাদের? কারণ একটাই। ভোট রাজনীতি।
আরও পড়ুন: মোদীকে তাড়াতে বিদেশি বিনিয়োগ! বলে কি
পরিণাম টা কি হলো? দিল্লিতে ট্রাম্পের সফরের সময় বেছে নেওয়া হলো। কারণ এই সময় পুলিশ কিছু কম থাকবে। প্রশাসনের নজর থাকবে অন্যদিকে। তার পর কিছু ওই অতিবাম আর সংখ্যালঘু মৌলবাদীদের উস্কানিতে রাস্তা অবরোধ হল। সুযোগ পেয়ে গেল কপিল মিশ্র মত ধান্দাবাজ হিন্দুত্ববাদীরা। যুবক শাহরুখ প্রকাশ্য রাস্তায় রিভলবার উঁচিয়ে চালালো গুলি। সেই ছবি viral হলো। জবাবে পাল্টা মার। বাধল দাঙ্গা। এটাই তো চাইছিলেন, দিল্লি পুলিশ এর সর্বাধিনায়ক মিস্টার শাহ। গুজরাটে উনি এটা করেছেন। তাই সংসদ হিসেবে গৌতম গম্ভীর যতই কপিল মিশ্রর বিরুদ্ধে বলুন, পুলিশ মিশ্রজির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না। এটা জেনে রাখুন।
আরও পড়ুন: ব্রিটিশ শাসনের যাঁতাকলে পড়েই ভারতীয়ত্বের উৎপত্তি!
আমার হাসি পায় কংগ্রেস আর বামেদের দেখে। এদের ভরসা ছিল কেজরিওয়াল। আরে ভাই, লোকটা আপদ মস্তক RSS। আপনারা জানতেন না? কোনো IIT এ ইঞ্জিনিয়ার ভোটে জিতে হনুমানজি কে ধন্যবাদ দিয়ে দলবল নিয়ে হনুমান মন্দিরে পুজো দিতে যায়?
যেমন বিজেপি আর শিবসেনা। দুটোই হিন্দুবাদী দল। কেজরিওয়াল ও তেমনি। শিবসেনার মত বলছে, আমিই আসল হিন্দু। বিজেপিকে ধুনে দিয়ে কেজরি জিতেছে দুই সপ্তাহও হয়নি। রাস্তায় আপের লোকেরা কোথায় ? কোথায় শান্তি মিছিল?

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: