এক জনের লেখনী ক্ষুরধার, আর এক জন ক্রমশই রাজনীতিতে পোক্ত হচ্ছেন। প্রথম জন, সাংবাদিক কুণাল ঘোষ এবং দ্বিতীয় জন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। লকেট চট্টোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে প্রবেশ কার্যত কুণাল ঘোষের হাত ধরেই। কুণাল ঘোষই মহাকরণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। তারপর কেটে গিয়েছে অনেক সময়। তৃণমূল ছেড়ে এখন তিনি বিজেপি নেত্রী। ৪ ডিসেম্বর বিজেপি সাংসদের জন্মদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন কুণাল ঘোষ। সেখানে তিনি লেখেন, ‘লকেট মমতাদির পাশে থাকলেই ভালো হত; তবে...’ জল্পনা শুরু তারপর থেকেই। কুণাল ঘোষ আর কী কী লিখলেন পড়ুন – (কুণাল ঘোষের ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো)

 

“লকেট মমতাদির পাশে থাকলেই ভালো হত; তবে...

লকেটকে ধরে না রাখতে পারা তৃণমূলের ভুল আর এতে বিজেপির লাভ।

 

সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম আজ লকেটের জন্মদিন। নানা পোস্ট, নানা ছবি। তাতে অন্তত এটা স্পষ্ট, বিজেপি এবং রাজনীতিতে বেশ ভালোই প্রভাব ফেলেছেন লকেট।

 

লকেট আমার পরিচিত। তিনি যখন রাজনীতিতে পদার্পনে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, তখন উৎসাহ দিয়েছিলাম। একাধিক কর্মসূচিতে তিনি সামিল হন। মমতাদিকে বলেছিলাম। তিনিও স্বাগত জানান। একদিন লকেটকে মহাকরণে দিদির কাছে নিয়ে যাই। কথা হয়। সেদিন দিদি মুখ্যমন্ত্রীর ঘর ছেড়ে একতলায় ক্যান্টিনে এসে বসেন। আড্ডা জমে যায়। সেই লকেটের আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে পদার্পণ।

 

পরে একসময় আমার জীবনে ঝড় আসে। আমার বহু পরিচিতের উপরই তার প্রভাব আসে। লকেটও কিছু দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির মুখে পড়েন। শেষে অপমানিত, অভিমানাহত হয়ে তৃণমূল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।

 

এর মাঝের কিছু কথা আপাতত না লিখলেও চলবে।

 

ততদিনে লকেটের মধ্যে সক্রিয় রাজনীতির নেশা সংক্রমিত হয়েছে। তৃণমূলের কিছু নেতার তরফে খানিকটা উপেক্ষা, অপমান লকেটের জেদ বাড়িয়ে দেয়। তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। আমি তখন বন্দি।

 

এরপর লকেট রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। দলীয় কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। এখন তিনি হুগলির সাংসদ। সংসদের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য। সংসদে এবং বাইরে, ভালো বক্তা।

 

বাংলায় সিনেমাজগত থেকে এসে অনেকে এমপি, এমএলএ হয়েছেন বটে; মঞ্চে পুতুলের মত দাঁড়িয়ে থাকেন আরও অনেকে; কিন্তু রাজনীতিবিদ বা সংগঠক হতে পারেন না সেভাবে। সেদিক থেকে লকেট অভিনেত্রী থেকে নেত্রী হয়ে ওঠার তালিকায় এক নম্বরে। কাছাকাছি শুধু শতাব্দী রায়।

 

মনে রাখুন, লকেট যখন গেছেন, তখন বিজেপির এই সাফল্য নেই। লকেটকে বিরোধী রাজনীতি করতে হয়েছে। সফলভাবে শাখা সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজপথে গ্রেপ্তার হয়ে লক আপে গেছেন। জেলায় ঘুরেছেন। নিজস্ব রাজনৈতিক পরিচিতি তৈরি করেছেন। হয়ত আরও পরিণত হতে হবে, কিন্তু এটাই বা কম কীসে?

 

সংগঠন থেকে মিছিল, সেমিনার থেকে জনসভা, সংসদের ঘরেবাইরে লকেট বিজেপিতে যে value add করছেন, অন্য কোনো দলের কোনো ফিল্মস্টার সেটা পারছেন না; এটা বাস্তব। পোশাক থেকে ভঙ্গি, ভাষা থেকে ব্যবহার, লকেট নিজেকে দারুণভাবে তুলে ধরছেন।

 

লকেটের রাজনৈতিক মঞ্চ বা বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নাও হতে পারি; কিন্তু এক পরিচিত উপেক্ষার জবাব দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন, এটা অবশ্যই ভালো দৃষ্টান্ত।

 

লকেটকে অপ্রত্যাশিত বড় খেলার ঘুঁটি হিসেবে নামাবে বিজেপি, ইঙ্গিত স্পষ্ট।

 

তৃণমূল বড় দল। অনেক তারকা। তাঁরা হয়ত মনে করতেই পারেন তাঁদের শিবিরে এত তারকা যে একজন লকেট গেলে ক্ষতি কী?

হয়ত ঠিক। কিন্তু ঘটনা হল এই মানসিকতায় থাকতে গেলে প্রতিপক্ষ যদি তার তুলনায় একজন ভালো অলরাউন্ডার পেয়ে যায়, সেটা কি বুদ্ধিমানের কাজ?

যাঁরা লকেটকে তৃণমূলে কোণঠাসা করছিলেন, লকেট দল ছাড়ায় তাঁরা আনন্দ পেয়েছিলেন।

আর উল্টো দিকে লকেট পেয়ে গেলেন স্পেস। তৃণমূলে কাজ করতে যে জমিটা লকেট পাচ্ছিলেন না; বিজেপিতে এসে অনেকটা জায়গা পেলেন এবং তার সদ্ব্যবহার করলেন।

 

রাতারাতি কেউ হেভিওয়েট হয়ে ওঠেন না। কিন্তু লকেটের সামনে অনেক সময় আছে। তাঁর পরিশ্রম এবং চেষ্টা প্রশংসনীয়।

 

মমতাদির পাশেই লকেট থেকে গেলে হয়ত ভালো লাগত।

কিন্তু লকেট কোণঠাসা অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আজ নিজের যে অবস্থান তৈরি করেছেন, তার জন্য অভিনন্দন তাঁর অবশ্যই প্রাপ্য।

 

( ছবি: মমতাদির কাছে লকেট প্রথমবার। মহাকরণের ক্যান্টিনে গল্পগুজব।)”

(এই প্রতিবেদনের ছবি কুণাল ঘোষের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া)

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: