রাজ্যের কারারক্ষীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন কারারক্ষীরা। সম্প্রতি রাজ্য সরকার পুলিশ বিভাগের জন্য ক্ষতিপূরণ মূলক যে অর্থ বরাদ্দ করেছে তা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে কারা দপ্তরের রক্ষীদের। ইতিমধ্যেই এব্যাপারে কারারক্ষীরা তাঁদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে আবেদনও জানিয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে। কিন্তু এখনও কোনো সদুত্তর না মেলায় ক্রমশই ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে তাঁদের মধ্যে। 

শনিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এদিন বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ২দিনের উইণ্টার কার্নিভ্যালের উদ্বোধন করতে আসেন রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে আসেন কারা দপ্তরের ডিজি অরুণ কুমার গুপ্তা, ডিআইজি নবীন কুমার সাহাও। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই কারা দপ্তরের রক্ষীরা দুটি প্রধান দাবী নিয়ে সরকারের কাছে আবেদন নিবেদন করেই চলেছেন। তার মধ্যে রয়েছে কমপেনসেটরি পে বা ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ এবং রেশন নিয়ে চুড়ান্ত বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। 

কারারক্ষী সূত্রে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী কারারক্ষীরা সারা বছরে ৩০ দিন এই কমেপেনসেটরি পে বা ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ পেয়ে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্য সরকার পুলিশ বিভাগের জন্য এই খাতে ৩০ দিনের বদলে ৫২ দিন করেছেন। কিন্তু আশ্চর্য্যজনকভাবেই বাদ দেওয়া হয়েছে কারারক্ষীদের। তাঁদের এই খাতে বরাদ্দ ৩০দিনই রয়ে গেছে। কারারক্ষীরা জানিয়েছেন, সারা বছর প্রতিটি দিনই তাঁদের কাজ করতে হয়। সেই অর্থে কোনো ছুটিও তাঁরা পাননা। উৎসব অনুষ্ঠানেও তাঁরা ছুটি পাননা।তাই সরকার তাঁদের সেই ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই কমপেনসেটরি পে ৩০দিনই রয়ে গেছে। 

অথচ সম্প্রতি রাজ্য সরকার পুলিশ বিভাগের জন্য এই ৩০ দিনকে বাড়িয়ে ৫২দিন করেছেন। শুধু এটাই নয়, কারারক্ষীরা জানিয়েছেন, রেশন খাতে বরাদ্দ নিয়েও চুড়ান্ত বৈষম্য চলছে এই কারা দপ্তরে। এক্ষেত্রেও রাজ্য পুলিশের জন্য বরাদ্দ ৯০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫০০ টাকা। অথচ কারা দপ্তরের ক্ষেত্রে ২০০ এবং ৯০০ টাকায় তা সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রেও বিভাজনের রেখা টেনে দেওয়া হয়েছে।

কারারক্ষীরা জানিয়েছেন, এক্সিকিউটিভ ক‌্যাটাগরী এবং নন এক্সিকিউটিভ ক্যাটাগরীর জন্য আলাদা আলাদাভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে। কারারক্ষীরা জানিয়েছেন, আরও অত্যন্ত হতাশার বিষয় যে দীর্ঘদিন ধরেই রেশন খাতে কারারক্ষীরা পেতেন ২০০ টাকা করে। সাম্প্রতিককালে কারারক্ষীদের এই খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয় ৯০০ টাকা। কিন্তু অবাক করার বিষয় হঠাতই সেই বরাদ্দ নন এক্সিকিউটিভদের জন্য কমিয়ে ফের ২০০ টাকাতেই রেখে দেওয়া হয়। অথচ কারারক্ষীদের দাবী, এব্যাপারে যুক্তিগ্রাহ্য কোনো কারণও দেখানো হয়নি। 

তাঁরা জানিয়েছেন, যেখানে রাজ্য পুলিশ কর্মীরা ১৫০০ টাকা করে রেশন খাতে টাকা পাচ্ছেন সেখানে কারারক্ষীদের রেখে দেওয়া হয়েছে চরম বঞ্চনার তালিকায়। অথচ এই বিষয় নিয়ে তাঁরা রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদনও জানিয়েছেন। কিন্তু আজও কোনো সুরাহা মেলেনি।

এদিকে, শনিবার বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আসেন রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তাঁকে এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানিয়েছেন, আসলে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে কারারক্ষীদের একচোখে দেখা হয়নি স্বাধীনতার পর থেকেই। আর তার জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। তিনি স্বীকার করেছেন এক্ষেত্রে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন ছিল। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, কারারক্ষীদের এই দাবী ন্যায্য। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানোও হয়েছে। 

পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য পুলিশকে যেভাবে দিনরাত বাইরে কাজ করতে হয় কারারক্ষীদের সেভাবে কাজ করতে হয়না। তুলনামূলক তাঁরা অনেকটাই ভাল অবস্থায় রয়েছেন। ইতিমধ্যে কারারক্ষীদের জন্য থাকার ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা হয়েছে। পরিকাঠামোরও অনেক উন্নতি করা হয়েছে - যা আগে ছিল না।

অন্যদিকে এব্যাপারে কারা দপ্তরের বর্ধমান রেঞ্জের ডিআইজি নবীন কুমার সাহা জানিয়েছেন, এব্যাপারে গোটা ফাইল অর্থ দপ্তরের কাছে পড়ে রয়েছে। সেখান থেকে এখনও কোনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবে তাঁরা আশা করছেন খুব তাড়াতাড়িই এই বৈষম্য দূর হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বর্তমানে কারারক্ষী রয়েছেন ৮০ জন। গোটা রাজ্যে রয়েছেন প্রায় ৩০০০ কারারক্ষী।

మరింత సమాచారం తెలుసుకోండి: